“ডিম সমাচার”

Category: আর্টিকেল Written by pnews

বিশ্ব ডিম দিবস (World Egg Day) প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবারে উদযাপিত হয়, যা ২০২৪ সালে ১১ অক্টোবর পালিত হবে। এই দিবসটি ডিমের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা, এবং মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডিমের অবদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে পালিত হয়।

বিশ্ব ডিম দিবসের উদ্দেশ্য:

বিশ্ব ডিম দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ডিমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই দিবসটি ডিম উৎপাদকদের জন্যও একটি বিশেষ দিন, যেখানে তারা ডিমের উৎপাদন এবং বিতরণে নিজেদের অবদান প্রদর্শন করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ডিম দিবসে আলোচনা সভা, প্রচারণা, এবং স্কুল-কলেজে শিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিম দিবস:

বাংলাদেশে ডিম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস। দেশের পোল্ট্রি শিল্প ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও, স্থানীয় পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের ডিম গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হয়।

 

ডিম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত, যা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং ভিটামিনসহ নানা উপকারি উপাদান সরবরাহ করে।

ক। ডিমের প্রধান পুষ্টিগুণঃ

ডিম একটি সম্পূর্ণ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যা ৯টি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিডসহ বহু ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে। ডিমে থাকে ভিটামিন এ, ডি, ই, বি১২, রিবোফ্লাভিন, সেলেনিয়াম, এবং কোলিন, যা শরীরের শক্তি উৎপাদন থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের উন্নয়ন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিম হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা, পেশী বৃদ্ধির সহায়তা, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

নিচে ডিমের প্রধান পুষ্টিগুণগুলো উল্লেখ করা হলো:

১. প্রোটিনের উৎস

২. ভিটামিন এবং মিনারেলসমৃদ্ধ

৩. চর্বি

৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

৫. মিনারেলসমূহ

৬. কোলিন

৭. ক্যালোরি কম

৮. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

৯. হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য

খ। ডিমের বিভিন্ন অংশ এবং তাদের কাজ সম্পর্কে জানাঃ

১. খোসা (Shell)

২. ঝিল্লি (Shell Membrane)

৩. বায়ুর থলি (Air Cell)

৪. অ্যালবুমেন (Albumen বা Egg White)

৫. জর্মক চক্র (Chalazae)

৬. কুসুম (Yolk)

৭. জার্মিনাল ডিস্ক (Germinal Disc)

৮. বাইরের পাতলা অ্যালবুমেন (Thin Outer Albumen)

৯. ঘন অ্যালবুমেন (Thick Albumen)

এই বিভিন্ন অংশ ডিমের সামগ্রিক কার্যকরী গঠন তৈরি করে এবং ডিমের ভ্রূণকে সঠিকভাবে বিকশিত হতে সহায়তা করে।

গ। ডিম উৎপাদন সিন্ডিকেটঃ  

বাংলাদেশে ডিমের বাজার সম্প্রতি বেশ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যাকে 'ডিম সমাচার' বলা হচ্ছে। একদিকে ডিম উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদকরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, অন্যদিকে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের প্রভাব নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

ডিম উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির পেছনে কিছু কারণ রয়েছে:

অ।ফিডের দাম বৃদ্ধি: পোলট্রি ফিড বা খাদ্যের দাম বাড়ছে, যা উৎপাদন খরচে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

আ। ইনফ্লেশন অন্যান্য খরচ: বিদ্যুৎ, জ্বালানি, এবং অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদকরা বেশি খরচের সম্মুখীন হচ্ছেন।

ই। রোগের প্রাদুর্ভাব: পোলট্রির মধ্যে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকা এবং চিকিৎসার ব্যয়ও বেড়েছে।

ঈ। সিন্ডিকেটঃ অন্যদিকে, বাজারে ডিমের দামের ওপর সিন্ডিকেটের প্রভাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যারা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের নাজেহাল করছে। এই সিন্ডিকেট ডিমের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা উচ্চ মূল্যে ডিম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঘ। করণীয়ঃ

ডিমের মূল্যবৃদ্ধি এবং সিন্ডিকেটের কারণে ক্রেতাদের যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তা মোকাবেলায় সরকারকে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সমস্যার সমাধানে সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিতে পারে তা হলো:

. উৎপাদন খরচ কমানো:

. জরুরি আইন প্রয়োগ:

. জনগণকে সচেতন করা:

. রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ:

. সরাসরি খামারিদের জন্য প্রণোদনা:

. সরাসরি খামারিদের ফিড উৎপাদনে সহায়তা:

৭. ফিড প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের সহায়তা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের নিজস্ব ফিড তৈরি করতে সহায়তা দিতে ছোট ফিড প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের জন্য সরকার ঋণ বা প্রণোদনা দিতে পারে।

খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি:

খামারিদের জন্য সরাসরি ক্রেডিট সুবিধা:

. ফিডের কাঁচামালে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ:

. স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থা তথ্যপ্রকাশ:

১০. সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কঠোর পদক্ষেপ:

১১. সুষম সরবরাহ নিশ্চিত করা:

১২. ফিড কোম্পানির উপর মনিটরিং এবং নিয়ন্ত্রণ:

 

উপসংহার

 

ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার যা প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি চোখ, মস্তিষ্ক, হাড়, এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিতভাবে ডিম খাওয়া পুষ্টির ঘাটতি পূরণ এবং শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারী নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদন খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ফিড কোম্পানির মালিকরা লাভবান না হয়ে সরাসরি খামারিরা সুবিধা পাবেন, এবং এর ফলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমে ডিমের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে। সর্বোপরি, ডিমের বাজার পরিস্থিতিতে ক্রেতারা, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হস্তক্ষেপ এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

 

লেখকঃ

   ডেপুটি চিফ ভেটেরিনারি অফিসার, ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি (বিএলএস), সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দলোন (বাপা) রাজশাহী,  সভাপতি (২০২৩-২৪), রোটারি ক্লাব অফ রাজশাহী সেন্ট্রাল; যুগ্ম নির্বাহী সম্পাদক (বাংলাদেশ লাইভস্টক জার্নাল; ISSN 2409-7691), সম্পাদক সুজন, (রাজশাহী মেট্রোপলিটন) এবং সভাপতি, বিবিসিএফ, রাজশাহী। ০১৭১১১৫৬৩৭৮, This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.