কোম্পানির মুনাফার জায়গা গোখাদ্য হতে পারে না: মপ্রাম উপদেষ্টা

Category: আজকের সংবাদ Written by pnews

কৃষির উন্নতি হয়েছে সত্যি, কিন্তু একই সাথে আমরা গোখাদ্য নষ্ট করেছি। গরুর, তথা প্রাণিকূলের নিজের খাবারের পছন্দ-অপছন্দ আছে। খামারিদের অভিব্যক্তির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমি বলতে চাই গোখাদ্য কখনও বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর মুনাফার জায়গা হতে পারে না। সেই জায়গা থেকে বিএলআরআই যে নেপিয়ার নিয়ে, ঘাসভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ঘাস উৎপাদনের জায়গা পর্যাপ্ত নয়। তাই আমাদের যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

আজ বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এ আয়োজিত “Strengthening Partnership for Innovation in Livestock Research and Development” শীর্ষক সেমিনার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার একথা বলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, কৃষি ও প্রাণিসম্প আলাদা নয়, বরং অবিচ্ছেদ্য। তাই কৃষকদের মতো প্রাণিসম্পদ লালন-পালনকারীদের সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যেই প্রাণিসম্পদ খামারিদের জন্য পৃথক ব্যাংক তৈরির বিষয়ে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেও মন্ত্রণালয় কাজ করছে। দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় আমিষের সরবরাহ নিশ্চিত করা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব। খামারিরা যেভাবে ডিম, দুধ, মাংস উৎপাদন করছে, তবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে। কৃষি কাজ বা প্রাণিসম্পদ পালনকে মর্যাদাপূর্ণ কাজ হিসেবে নিতে হবে।

এসময় তিনি বিএলআরআই ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের ভালো বিজ্ঞানী আছে, ভালো কর্মকর্তা আছে। বিএলআরআই ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে আলাদা ভাবা যাবে না, এক ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) ও চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “Feed Based Training for Livestock Services Extension Staff, Co-Operatives and Individual Farmers” শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠান এবং “Strengthening Partnership for Innovation in Livestock Research and Development” শীর্ষক সেমিনার আজ ২৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বিএলআরআই সম্মেলন কক্ষে (চতুর্থ তলা) অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এছাড়াও, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং ডেপুটি ডিরেক্টর গুলবালি ড. ক্যামেরন ক্লার্ক। আর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক।

সকাল ১০.০০ ঘটিকায় পবিত্র গ্রন্থ হতে পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু্ হয়। শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক ড. এ বি এম মুস্তানুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্যেরে পরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং ডেপুটি ডিরেক্টর গুলবালি ড. ক্যামেরন ক্লার্ক। তিনি তার প্রবন্ধে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরদারকরণ এবং যৌথ কর্মকাণ্ড গ্রহণের সফলতা ও সম্ভাবনা এবং স্থানীয় সম্পদ ও জাতসমূহ ব্যবহার করে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এসময় তিনি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ পালনের সাদৃশ্য ও সম্ভবনা নিয়েও আলোচনা করেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে প্রবন্ধ সম্পর্কে আলোচনা করেন অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এর সাউথ এশিয়ান রিজিয়নের রিজিওনাল ম্যানেজার ড. প্রতিভা সিংহ।

এর পরে অনুষ্ঠিত হয় উন্মুক্ত আলোচনা। উন্মুক্ত আলোচনা অংশ পরিচালনা করেন বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক। এসময় বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, খামারি ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিরা একে একে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিএলআরআই এর মধ্যে চমৎকার একটি সম্পর্ক রয়েছে। প্রযুক্তিসমূহ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পরপরই তা হস্তান্তরের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারকরণের উপরেও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক তার সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মশালাটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, বিএলআরআই এর অনেক সম্ভবনাময় প্রযুক্তি রয়েছে। এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিএলআরআই এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে। বিজ্ঞানীদের নিজস্ব কোন ক্ষেত্র নেই, সকল ক্ষেত্রেই তার কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে, সকল ক্ষেত্রেই অবদান রাখতে হবে।

ঘাসভিত্তিক প্রাণিখাদ্যের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং উৎপাদন কৌশল নিয়ে আয়োজিত তিন দিনব্যপী এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা উদ্যমী খামারি ও উদ্যোক্তা। তাদের সাথে ছিলেন বিএলআরআই এর বিভিন্ন পর্যায়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।